শুক্রবার ৮ আগস্ট ২০২৫ - ০৯:২২
সত্যের জন্য আত্মোৎসর্গ: শহীদ মাহমুদ সারেমির স্মরণে জাতীয় সাংবাদিক দিবস

ইরানে প্রতি বছর ৮ আগস্ট জাতীয় সাংবাদিক দিবস হিসেবে পালিত হয়, শহীদ সাংবাদিক মাহমুদ সারেমির স্মরণে। ১৯৯৮ সালের এই দিনে আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফে তিনি ইরানি কনস্যুলেটের আটজন সদস্যসহ নির্মমভাবে নিহত হন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি: সাংবাদিকরা একটি কার্যকর গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা জনগণের চোখ ও কান হিসেবে কাজ করেন—সত্য তথ্য প্রদান, জনমত গঠন এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় আনাই তাদের দায়িত্ব।

প্রতিদিনের ছোট-বড় ঘটনা সঠিকভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে সাংবাদিকরা সমাজকে সচেতন করেন। এই পেশায় সৎ, নিরপেক্ষ ও প্রামাণ্য রিপোর্টিং অপরিহার্য। তবে সত্য প্রকাশের পথ সবসময় সহজ নয়; অনেক সময় সাংবাদিকদেরকে নানা ঝুঁকি ও হুমকির মুখে পড়তে হয়।

তবুও তাঁদের কলম সত্যের পক্ষে কথা বলে। এই কলমের শক্তি যেমন বিশাল, তেমনি এর দায়িত্বও গভীর। সাংবাদিকদের কাছে সমাজ প্রত্যাশা করে পেশাগত নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতার সর্বোচ্চ মান।

মাহমুদ সারেমি: সাহসী সাংবাদিকতার প্রতীক
মাহমুদ সারেমি ১৯৬৮ সালের জুন মাসে ইরানের বোরুজের্দ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আফগানিস্তানে ইরনার (IRNA) কার্যালয়ের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। সে সময় তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশ দখল করছিল, যার পেছনে ছিল কিছু পশ্চিমা দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন।

সারেমি কঠিন ও বিপজ্জনক পরিবেশে দায়িত্ব পালন করে চলেন। ১৯৯৮ সালের ৮ আগস্ট, তালেবান যখন মাজার-ই-শরীফ দখল করে নেয়, তখন ইরানি কনস্যুলেটের নিকটে অবস্থানকালেই তিনি শহীদ হন।

একজন সাংবাদিকের শেষ বার্তা
তাঁর জীবনের শেষ প্রতিবেদন ছিল তালেবানের মাজার-ই-শরীফ দখলের সময় ইরনার মাধ্যমে পাঠানো একটি বার্তা, যেখানে তিনি বলেছিলেন: “আজ ১৯৯৮ সালের ৮ আগস্ট। আমি মাহমুদ সারেমি, ইরনার প্রতিনিধি। তালেবান মাজার-ই-শরীফ দখল করেছে। তারা ইরানি কনস্যুলেটের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমি কী করব, আমাকে বলুন…”

এই শব্দগুলোর পরই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়—এবং সারেমির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর সাহসিকতা ও দায়বদ্ধতার বার্তা এখনও অম্লান।

একটি স্মরণ নয়, একটি অঙ্গীকার
জাতীয় সাংবাদিক দিবস শুধু মাহমুদ সারেমি এবং অন্যান্য শহীদ সাংবাদিকদের স্মরণ করার দিন নয়—এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, পেশাগত নৈতিকতা, এবং জনসচেতনতা তৈরিতে সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রতি সম্মান জানানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ।

ইরানের গণমাধ্যমকর্মীরা এই দিনে সারেমির আদর্শ ও আত্মত্যাগকে স্মরণ করে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকার সংকল্প গ্রহণ করেন। দেশব্যাপী আয়োজিত স্মরণসভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানগুলো তাঁর স্থায়ী প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করে।

সারেমির জীবন ও কর্ম আজও ইরানি সাংবাদিকদের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা—সত্যকে তুলে ধরার সাহসিকতা, ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান, এবং পেশাগত দায়িত্ববোধের এক অনন্য প্রতিচ্ছবি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha